মোঃ আবুল বশর সিলেট প্রতিনিধি।
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাওলাদার আজিজুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন। এতে উপজেলা পর্যায়ে কলেজ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নিয়াজ উদ্দীন।
এছাড়া শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ রোভারসহ বিষয় ভিত্তিক আরো ১৫টি ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে এই সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। যা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ ইভেন্টে বিজয়ী হওয়ার নতুন রেকর্ড।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ এর প্রতিযোগিতায় কলেজ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক সনজিৎ কান্তি দেব। এছাড়া এই কলেজের ছাত্র রাহিন আহমদ শ্রেষ্ঠ রোভার, মো. লায়েক আহমদ শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি, জাহাঙ্গীর আলম শ্রেষ্ঠ রোভার গ্রুপ নির্বাচিত হয়েছেন।
পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক সনজিৎ কান্তি দেব এর এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। উনার অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,,
পেশাগত জীবনে পেশার স্বীকৃতি কে না চায় । প্রায় আটাশ বছর চাকুরী শেষে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ এ বড়লেখা উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষক হবার আনন্দে আমি আনন্দিত অনেকটা উদ্বেলিত । আমি আমার এ অর্জন আমার বাবার স্মরণে উৎসর্গ করলাম।আজ আমার বাবা বেঁচে থাকলে তিনিও এ আনন্দে যুক্ত হতেন । স্মরণ করছি আমার বড়ভাই সঞ্জয় কান্তি দেব, আমার সকল শিক্ষকবৃন্দ, বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মো. নিয়াজ উদ্দীন, সহকর্মীবৃন্দ এবং আমার পেশাগত জীবনের অগণিত ছাত্রছাত্রীবৃন্দকে যাঁরা এ অর্জনের পিছনে আড়ালে থেকে আমায় অনুপ্রেরণা দিয়ে প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছেন । শিক্ষকতা একটি মহান পেশা যার সংস্পর্শ ছাড়া কারো জীবনে সাফল্য আসতে পারে না । আমি গর্বিত আমি এ গুরুত্বপূর্ণ পেশায় আসতে পেরেছি বলে। চাকরিকাল প্রায় শেষের পর্যায়ে, হাতে আছে আর মাত্র কয়েকটা বছর । ফেলে আসা দিনগুলোর মতো অনাগত কণ্টকমুক্ত সময়টা কাটাতে চাই। সবার কাছে এ আমার কামনা করজোরে। জীবনে চলতে গিয়ে আমার প্রাণের স্পন্দন বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের ভালবাসা আমাকে আলোর পথে হাঁটতে সাহায্য করেছে । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আমার শুভানুধ্যায়ী বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের প্রাণের আকুতি,উচ্ছ্বাস কিংবা আবেগ আমাকে আরো উজ্জীবিত করে আগামির মসৃণ পথ তৈরী করতে প্রলুব্ধ করেছে।
সনজিৎ কান্তি দেব এর জীবন বৃত্তান্ত।
সনজিৎ কান্তি দেব১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিলেট সদরের শিববাড়ি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন । পিতা সত্যেন্দ্র মোহন দেব এবং মাতা শিবানী রানী দেব (যুঁথিকা) । ১৯৮৫ সালে গোটাটিকর হাই স্কুল থেকে তিনি ১ম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন । তিনিই প্রথম ঐ স্কুলে ১ম বিভাগে পাশ করেন । ১৯৮৭ সালে মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন । একই কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে ২য় শ্রেণীতে বিএস-সি (অনার্স) পাশ করে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ।
ছাত্রাবস্থায় মরনোত্তর চক্ষুদান করে রেখেছেন এবং নিয়মিতভাবে রক্তদান করতেন। ১৯৯৬ সালে কর্মজীবনে শুরুতে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজারে জালালাবাদ হাই স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন । তারপর আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ,কমলগঞ্জে কিছুদিন অধ্যাপনা করে ২০০২ সাল থেকে তিনি বড়লেখা সরকারি ডিগ্রি কলেজে পদার্থজ্ঞিান বিষয়ে অধ্যাপনা করে চলেছেন । সেই সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড,সিলেট এর পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশায় ও যুক্ত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন সময়ে তিনি সংবাদপত্রের রিপোটার হিসাবে কাজ করেছেন।
সনজিৎ কান্তি দেব এর পরিবার।
সহধর্মিণী ছন্দা রানী দেব সম্পা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে শিক্ষকতা করছেন । তাঁদের ছেলে সন্দীপ্ত দেব পূজন এ বছর কৃতিত্বের সাথে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করেছে ও মেয়ে স্বস্তিকা দেব সৃষ্টি সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী। তিনি কলেজ জীবনে ‘শিববাড়ি সনাতনী যুব সংঘ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন । বর্তমানে অবসর কাটে মায়ের স্মরণে গঠিত শিবানী-মাধুরী কল্যাণ ট্রাস্ট এর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ।
বহু গুণে গুণান্বিত একজন সনজিৎ কান্তি দেব। তিনি
একজন কবি হিসাবে সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনে তিনি অতি পরিচিত জন । বিজ্ঞানের রাজ্যে তাঁর অবাধ বিচরণ থাকা সত্ত্বেও বিবিধ চিন্তা,বিবিধ চেতনায় তিনি সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। ২০১১ সালে তাঁর ১ম কাব্য ‘নগ্নতার আবরনে এবং ২০২৪ সালে ‘অনন্তকালের প্রতিকৃতি’ নামে আরেকটি কাব্য প্রকাশিত হয় । তাছাড়া বিভিন্ন প্রকাশনা/ম্যাগাজিনের সম্পাদনা-সহযোগী হিসাবে কাজ করতে দেখা যায়।। (ধন্যবাদ সবাইকে)