ডেস্ক নিউজ :
মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্মৃতি বিজড়িত স্থান ওসমানী জাদুঘরে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সকাল আট ঘটিকায় চৌহাট্রাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল সাড়ে দশটায় শিশু শ্রেণী হতে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের চারটি বিভাগে বিভক্ত করে সুন্দর বাংলা হাতের লেখা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বিকাল সাড়ে তিন টায় ওসমানী জাদুঘর প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রতি বিভাগ থেকে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান বিজয়ীকে আকর্ষনীয় পুরস্কারসহ অংশগ্রহণকারী সকলকে সান্ত্বনা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে তিনটায় ওসমানী জাদুঘরের সহকারী কীপার মো: আমিনুল ইসলাম এর সঞ্চালনা এবং বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি প্রচার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি খায়রুল আলম সুমন এর সভাপতিত্বে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও অমর একুশে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ওসমানী জাদুঘরের সহকারী কীপার মো: আমিনুল ইসলাম বলেন আজ এমন একটি দিন যে দিনটি না আসলে আমরা কখনোই মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। পেতাম না একুশের চেতনার হাত ধরে লাল সবুজ পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট একদিনে তৈরি হয়নি, বাঙ্গালি জাতির আত্ম-অন্বেষণের ও অধিকার আদায়ের সচেতনতা বহিঃপ্রকাশ এই অমর একুশ। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নরুল আমীন সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তারা। ছাত্রসভার সিন্ধান্ত মোতাবেক ১০ জন মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙবে। ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভাঙলো। সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হয়েছিলো। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যদি সালাম বরকত রফিক জব্বারেরা মায়ের ভাষার দাবিতে প্রাণ না দিতো তাহলে কখনোই আমরা রাষ্ট্র ভাষা বাংলা পেতাম না। সেই আন্দোলন কেবল ভাষার জন্যই ছিলো না সে আন্দোলন ছিলো পাকিস্তানী শাসন-শোষণের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বাঙ্গালির দৃঢ় প্রতিবাদ। বিভিন্নভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা বাঙ্গালিকে দমন-পীড়ন করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলো। বাঙ্গালির সচেনতা ও প্রতিবাদী দুর্বার আন্দোলনে তারা বারবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই তাই মাথা নত না করার এমন এক রক্তাক্ত ইতিহাস যার হাত ধরে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা। একুশে ফেব্রুয়ারিই যেন বাঙ্গালির অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যেন চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমুহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে এসেছে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার চেতনা। যে চেতনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ আগামীর দিকে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্টের ক্রয় ব্যবস্থাপক মো: আরিফুজ্জামান ও বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি প্রচার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: সুয়েজ হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যারা তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হয়ে আমাদেরকে আজ বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। শুধু তাই নয় আজ উনারা শহীদ হয়ে আমাদের যে ভাষাটি উপহার দিয়ে গেছেন ওই ভাষাটি পুরো বিশ্বে পরিচিত, আমাদের এত বড় সৌভাগ্য বর্তমানে ভাষা দিবসটি শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিগণ বক্তব্যে বলেন, পাকিস্তান বাহিনী জোর করে আমাদের মাতৃভাষাকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল কিন্তু তারা পারেনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বীর বাঙ্গালীরা জীবন দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করে গেছেন। আমরা তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি প্রচার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় প্রেসক্লাব এর সভাপতি খায়রুল আলম সুমন বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা ওসমানী জাদুঘরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের অতিথি, শিশুদের অভিবাবকসহ যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে ওসমানী জাদুঘরের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
তিনি আরও বলেন, ১৯৫২ সালের এইদিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর তৎকালীন পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। তাদের মধ্যে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বার অন্যতম। তাই দিনটিকে শহীদ দিবস বলা হয়ে থাকে। আমি প্রথমে উনাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন উনাদের শহীদের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতবাসী করেন। উনাদের প্রানের এবং তাজা রক্তের বিনিময়ে আমাদের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় আমরা আমাদের ওই ভাষাকে নিয়ে আজ সারা বিশ্বে অহংকার করছি, কারণ আমাদের রাষ্ট্র ভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এটা আমাদের বাঙ্গালী জাতির গর্ব। আরেকটা বিষয় পরিস্কার আজ এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বলছি বঙ্গবীর ছিলেন একজন মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। দ্বিতীয় কোন বঙ্গবীর নেই। আরও অনেকে তাদের নামের পাশে বঙ্গবীর ব্যবহার করেন। এটা কেন ব্যবহার করা হয় একমাত্র তারাই ভালো বলতে পারবেন।